হাউস সমূহ

হাউস সমূহ

মাইকেল মধুসূদন হাউস

সনেট প্রবক্তা মাইকেল মধুসূদন দত্ত

বাংলা সাহিত্যে রেনেসাঁর মানসপুত্র, বিষয় ভাবনা এবং আঙ্গিক প্রকরণে  অভিনবত্বের দাবীদার, বাংলার প্রাচ্য শিল্প চেতনার মূলোৎপাটন করা বাংলা সাহিত্যে বিপ্লবী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৮৭৩)। তিনি সাহিত্যের আঙ্গিকে এনেছেন নতুনত্ব। বাংলা কবিতায় সনেটের প্রবক্তা তিনি। বহুভাষাবিদ মধুসূদন দত্ত ইংরেজি সাহিত্যের বড় কবি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমান; কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে গভীরভাবে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন এবং সেই ঐতিহ্য সূত্রেই তিনি বাংলা সাহিত্য জগতে অমর  মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে হয়েছেন একমাত্র বাঙালি মহাকবি। কেবল এক মহাকাব্যই নয়; তিনি চতুর্দশপদী কবিতাবলী, ব্রজাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা,  তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য; কৃষ্ণকুমারী, শর্মিষ্ঠা, একেই বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, পদ্মাবতী, মায়াকানন নাটক রচনা করেছেন। তার  শ্রেষ্ঠত্বকে ধারণ করেই মাইকেল মধুসূদন হাউসের নামকরণ। তিনি কেবল যুগন্ধর নন; বরং যুগস্রষ্টা। তাঁর সৃষ্টির প্রেরণায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্য সন্ধানী হয়ে উঠবে এবং নতুন ভাবনায় নিজেদের সমৃদ্ধ করবে।

জসীম উদ্দীন হাউস

পল্লিকবি জসীম উদ্দীন

বাঙালি লোকজীবনের সামগ্রিকতাই পল্লীর কবি, বাংলার কবি জসীম উদ্দীনের (১৯০৩-১৯৭৬) কাব্যসাধনার অনুষঙ্গ। নাগরিক জীবনের প্রবল প্রবাহকে পাশ কাটিয়ে পল্লী প্রকৃতির নির্জনে বসে পল্লীর সমাজ, সংস্কৃতি আর পল্লী মানুষের জীবনকে সকাব্যে প্রাণ সঞ্চার করেছেন কবি জসীম উদ্দীন। তাই তিনি  পল্লিকবি। তাঁরই নামানুসারে এই হাউসের নাম রাখা হয়েছে জসীম উদ্দীন হাউস। বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এই অমর কবি জসীম উদ্দীন  জন্মেছিলেন ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অমোঘ প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে কাব্য রচনা তাঁর প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। সমাজ সভ্যতার সকল জটিলতা পরিহার করে তার সৃষ্টি সম্ভার পাঠককে আনন্দ দান করে বলে তাঁর কাব্য হয়ে উঠেছে জনমুখী। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাহিনী কাব্য। একই সাথে তাঁর হাতে রচিত হয়েছে রাখালি, বালুচর, মাটির কান্না, ধানক্ষেত ইত্যাদির মতো আরো অনেক অমর কাব্য। এছাড়াও তাঁর কলমের স্পর্শে সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মানুষের হৃদয়স্পর্শী পল্লিগান। পল্লিকবি জসীম উদ্দীনের  কাব্যপাঠে শিক্ষার্থীরা সুস্থ, স্বাভাবিক ও প্রকৃতি প্রেমিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হবে।

কাজী নজরুল ইসলাম হাউস

বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম

 

বিদ্রোহের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে মোহময় রবীন্দ্রবলয় ছিন্ন করে সাহিত্য জগতকে স্বকীয়তায় বিস্মিত করে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)। কেবল কবি নন, সম্প্রদায়োর্ধ্ব ‘সকল ধর্ম সার মানব ধর্ম’  এই বিশ্বাসে ঋদ্ধ একজন যথার্থ দেশপ্রেমিক কাজী নজরুল ইসলাম। কবি  সত্তার বাইরে মানুষ নজরুল আর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। বৈশ্বিক মানবিক সংকটকে মোকাবেলা করার এক মহৎপ্রাণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম । আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর নামানুসারে হাউসের নাম ‘কাজী নজরুল ইসলাম হাউস’। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সৃষ্ট কবিতা গান আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণও করেছিলেন। তাঁর রচনায় হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। কাজী নজরুল ইসলামের পথ সত্যের পথ। সত্যের পথেই তিনি আমাদের মানবসত্যকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা, নতুনের গান, বাঁধনহারা, বিষের বাঁশি, সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থ; মৃত্যুক্ষুধা নাটক, রুদ্রমঙ্গল প্রবন্ধগ্রন্থ ইত্যাদি রচনা করেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেয়া হয় এবং ১৯৭৬-এ স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে এই ক্ষণজন্মা মানব মহাপ্রয়াণ  লাভ করেন।